জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়
- টি সাজিত
- প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২২, ১০:২১ AM , আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২, ০১:০৫ PM
উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। সেটা হতে পারে আন্ডার গ্রাজুয়েশন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন কিংবা ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য। আর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চমৎকার জায়গা। জ্ঞান অর্জনের জন্য সকল ধরনের সুবিধা ও ব্যবস্থা এখানকার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই আছে।
আমেরিকা-ইউরোপের উন্নত কোনো দেশে পড়তে যাওয়াটা খুব কঠিন কোনো বিষয় নয়। এটা অনেকটাই ধৈর্য আর পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাই গ্রামের কোন কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন কিংবা দেশের প্রথম সারির কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে— সেটা মুখ্য নয়।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড জয়ী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের গল্প
শিক্ষা মন্ত্রণালয়-ইউজিসি অনুমোদিত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি থাকলে দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর আবেদন করার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের কথা বলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে তাহলে তাকে এড়িয়ে চলুন। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
আশরাফুল খান: ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকার ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন।
স্নাতকে তার সিজিপিএ-৪.০০ এর মধ্যে ছিলো ৩.৩২। আর IELTS ৬.৫, GRE ৩০, ১টি প্রজেক্ট ছিলো, ১ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা ছিলো। বিএসসি চলাকালীন সময়েই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন আশরাফুল, আর স্বপ্ন দেখতেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানোর তালিকায় ১৪তম বাংলাদেশ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন বলে নিজের মেধা যোগ্যতার কমতি রাখেনি তিনি। বৃত্তিসহ আমেরিকার স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা গবেষণা করছেন। যেখানে পৃথিবীর সেরা সেরা ইউনিভার্সিটির মেধাবীরা আছেন।
দমে যায়নি ইমরান: বাবা ইসলাম উদ্দিন এবং মা সাহিদা বেগমের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় ইমরান হোসেন। মৌলভীবাজার জেলার তারাদরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পড়াশোনা করেন মুড়াউল উচ্চ বিদ্যালয়ে। বড়লেখা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তারপর ভর্তি হন সিলেট মুরারি চাদ কলেজে গণিত বিভাগে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাস করে বের হন। এখন পড়াশোনা করছেন টেক্সাসে অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়-কমার্সে। একইসঙ্গে গণিত বিভাগে গ্র্যাজুয়েট টিচিং সহকারীর কাজও করছেন।
সাইদ সাজ্জাদুল: অনার্স করেছেন জাতীয় বিশবিদ্যালয়ের (সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজ) ইংরেজি বিভাগ থেকে। বর্তমানে লেখাপড়া করছেন আমেরিকার সাউদার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। টিচিং এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন।
আরও রয়েছেন মরিয়ম, যিনি কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে বিএসসি করেছেন পদার্থ বিজ্ঞানে। আংশিক ফান্ডিং নিয়ে আমেরিকাতে মাস্টার্স করছেন। তার বিএসসি সিজিপিএ ছিলো ৩.৪০ এর কাছাকাছি, IELTS 6, ভলেন্টিয়ারি এক্সপেরিয়েন্স ছিলো নাসার এস্ট্রো ফিক্সে।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষায় কোন দেশে যাবো?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালিতে পড়তে গেছেন আশা বড়ুয়া। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত থেকে স্নাতক শেষ করা এই গ্রাজুয়েট বর্তমানে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাইড ম্যাথম্যাটিকস নিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আশিকুর রহমান গেছেন ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন মিসিসিপলে। সিজিপিএ ছিলো ২.৯১, জিআরই ৩১৭, টোফেল ৯৯।
সংসারে ৫ সন্তান। আশুতোষ নাথ সবার ছোট। তার আগের ১ ভাই ও ৩ বোনের কেউই উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। সবার ছোট আশুতোষের ওপর বাড়তি ভালোবাসা ছিল বড় ভাই পরিতোষ নাথের। জামা সেলাইয়ের কাজ করতেন তিনি। আয়ের একটা বড় অংশই ব্যয় করতেন আশুতোষের পড়ালেখার পেছনে।
উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজে রসায়ন বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন তিনি। তবু খরচ জোটানো কঠিন। শহরের চকবাজারে কম্পিউটারের দোকানে কাজ নেন তিনি। লেখা কম্পোজ করা ও গ্রাফিকসের টুকটাক কাজ—এ থেকে যা আয় হতো, তা দিয়ে নিজে চলতেন, বাড়িতেও কিছু পাঠাতেন। এমনি করে চলছিল দিন।
স্নাতকে ৩.১৬ সিজিপিএ নিয়ে পাস করেন। স্বপ্ন ডানা মেলে। ঠিক করলেন, ঢাকা কলেজে রসায়নে স্নাতকোত্তর করবেন। ভর্তি হয়ে তিন দিন ক্লাসও করেছিলেন। এই সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রসায়নে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলো। ভাবলেন, একবার চেষ্টা করেই দেখি।
চেষ্টায় সুফল মিলল। ভাইভা দিয়ে বুয়েটে সুযোগ পেয়ে গেলেন আশুতোষ। ক্যাম্পাসটা অফিসের পাশে হওয়ায় পড়ালেখাতেও সুবিধা হয়েছিল। ৩.০৮ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি।
বুয়েটে পড়ার সময়ই মূলত গবেষণায় তার ঝোঁক তৈরি হয়েছিল। এ সময় আন্তর্জাতিক তিনটি জার্নালে তার গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়। আশপাশের সবাইকে তখন দেখছেন বিশ্বের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে। আশুতোষ এবার নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করে আবেদন করা শুরু করেন বিশ্বের নানা প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বছরের মার্চের শেষ দিকে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস বোস্টন তার কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে কয়েক দফায় ভার্চ্যুয়াল ভাইভা নিয়ে পিএইচডি গবেষক হিসেবে আবেদন গ্রহণ করে। বর্তমানে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অরগানিক কেমিস্ট্রির উপর পিএইচডি করছেন।
যা জানা জরুরি
আমেরিকায় স্কলারশিপ বা ফুল ফান্ডিংয়ে পড়াশোনা করা যায় তা সবার জানা। কিন্তু কীভাবে-কোথায় থেকে স্টুডেন্টকে স্কলারশিপ বা ফান্ডিং এর টাকা-পয়সা দেয়া হয় সে সম্পর্কে প্রশ্ন আছে অনেকের মনে।
স্কলারশিপ
বাংলাদেশে যেমন প্রাইমারি/হাইস্কুলে দেওয়া হয় বৃত্তি। আমেরিকায় এমন অনেক ইউনিভার্সিটি আছে যারা কিনা উচ্চশিক্ষার জন্য (PhD/Master's) প্রোগ্রামে স্কলারশিপ বা বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটির নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করতে হবে যেমন: (CGPA, GRE Score, IELTS/TOEFl Score) সহ আনুষঙ্গিক রিকোয়ারমেন্টগুলো ফুলফিল করা। ২.৫০ সিজিপিএ নিয়েও স্কলারশিপ পেতে দেখেছি পাবলিক, প্রাইভেট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। সিজিপিএ খারাপ থাকলে IELTS, GRE-তে ভালো করে কভার দিতে পারবেন। একটা খারাপ থাকলে অন্যটা দিয়ে কভার করা যায়।
ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন পেলে তারাই আপনাকে স্কলারশিপের জন্য জন্য বিবেচনা করবে। কিছু ক্ষেত্রে সরকার অথবা কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হয়। সিলেকশন কমিটি আপনাকে যোগ্য বিবেচনা করলে প্রদান করবে স্কলারশিপ। ফুল স্কলারশিপ পেলে আপনাকে দিতে হবে না কোন টিউশন ফি। এছাড়া আপনার থাকা, খাওয়া, বই-পত্র কেনা, ভ্রমণ ভাড়া, রিটার্ন বিমান ভাড়া, হেলথ ইনস্যুরেন্সসহ যাবতীয় খরচ বহন করবে স্কলারশিপ কতৃপক্ষ। আপনি নিয়মিত ক্লাস ও পড়াশোনায় মনোযোগী থাকবেন। স্কলারশিপ কতৃপক্ষ আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাবে। যাকে বলা হয় ফুলব্রাইট স্কলারশিপ।
ফান্ডিং
আমেরিকায় পড়াশোনার সবথেকে কার্যকরী উপায় ফান্ড ম্যানেজ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় যারা পড়াশোনা করতে আসেন তাদের অধিকাংশই ফান্ডিং পেয়ে থাকে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের মাধ্যমে।
অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ
অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ এক প্রকার চাকরি। ইউনিভার্সিটি/ডিপার্টমেন্টের ল্যাবে কাজ করে অথবা প্রফেসরের গবেষণার কাজে সাহায্য করে পাওয়া যাবে বেতন। বেতনের সেই টাকা দিয়ে চালিয়ে যাবেন খরচাপাতি।
অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ তিন ধরনের
১) টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (TA): টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপে আপনি ফান্ড পেতে পারেন। হতে পারে সেটা ১ বছর টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ। সেক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে আপনাকে ফান্ড দেয়া হবে। যেটা দিয়ে আপনার খরচাপাতি চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে এটি প্রফেসরের ফান্ড নয় সেন্ট্রালি ফান্ড দেয়া হবে। এখন কথা হচ্ছে শিক্ষক সহকারি হিসেবে আপনি যে ফান্ড পেলেন তার বিনিময়ে আপনার কাজ কি? টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ হিসেবে পড়াশুনা করতে আসলে টিচারের কাজে সাহায্য করতে হবে যেমন: আন্ডারগ্র্যাড স্টুডেন্টদের পরীক্ষার খাতা গ্রেডিং করা, লেকচার ম্যাটেরিয়াল তৈরি করা, ল্যাবে স্টুডেন্টদের কাজগুলো সম্পর্কে বুঝানো, ক্লাসে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা— খোঁজ খবর রাখা ইত্যাদি! তবে এসব কাজের জন্য আপনাকে আগে থেকেই খুব এক্সপার্ট হয়ে আসতে হবে এমন নয়। সুবিধার জন্য ডিপার্টমেন্ট থেকে আপনার ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হবে। ইউনিভার্সিটি এবং ডিপার্টমেন্ট ভেদে কাজের ধরণ হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন।
২) রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (RA): রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ হিসেবে ফান্ড নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সেক্ষেত্রে প্রফেসরের আন্ডারে ল্যাবে কাজ করতে হবে, প্রফেসরের গবেষণার কাজে সাহায্য করতে হবে। যার বিনিময়ে পাবেন টাকা- পয়সা। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের ফান্ড দেয়া হয় মূলত প্রফেসরের ফান্ড থেকে। গবেষণার জন্য প্রফেসরের কাছে যে টাকা-পয়সা আসে সেখান থেকে প্রফেসর তার গবেষণার কাজে সহযোগী হিসেবে আপনাকে ফান্ড দিবে। সোজা কথায় রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ হিসেবে টিউশন বা অন্যান্য সুবিদা বাবদ যে টাকা পাবেন তা সরাসরি প্রফেসরের ফান্ড থেকে দেবে।
৩) গ্রাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (GA): গ্রাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের ফান্ড ডিপার্টমেন্ট থেকে দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি/ডিপার্টমেন্টের কাজ বিশেষে একজন (GA)-কে নেয়া হয়। এটা নির্ভর করছে ডিপার্টমেন্টের উপর। গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপে তেমন বিশেষ কোন কাজ দেয়া হয়না। যে কারণে (GA)-কে নন-স্পেশালাইজড অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ বলা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে যেকোন কাজ করা লাগতে পারে। হতে পারে সেটা আ্যডমিনিস্ট্রেটিভ কাজ, সাইড প্রজেক্টের কাজ, ল্যাব অথবা অন-ক্যাম্পাসে।
তবে অধিকাংশ স্টুডেন্টই আসে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ এবং রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপে পড়াশুনা করতে। ডিপার্টমেন্ট থেকে একজন টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ হিসেবে নেয়ার সময় গঠন করা হয় ৪-৫ জনের একটি কমিটি, যেখানে গ্রাজুয়েট চেয়ারম্যান থাকেন প্রধান। তাদের প্রথম কাজ হলো যে আবেদন গুলো জমা পরেছে তা রিভিউ করা এবং রিকোয়ামেন্ট ফুলফিল করতে পারেননি এমন আবেদনগুলো বাতিল করা। সেই সাথে তারা এটিও ঠিক করেন মোট কতজন স্টুডেন্ট নিতে পারবেন। সে হিসেবে বাছাইকৃত উপযুক্ত স্টুডেন্টদের করা হয় ই-মেল এবং জানতে চাওয়া হতে পারে আপনি তাদের প্রোগ্রামে পড়াশুনায় আগ্রহী? আপনার পজেটিভ রিপ্লাই পেলে তারা আপনাকে ইন্টারভিউয়ে ডাকবে। হতে পারে সেটা ফোন কল ইন্টারভিউ অথবা গুগল হ্যাং আউটস বা স্কাইপিতে। ইন্টারভিউতে মূলত এটাই যাচাই করা হয়ে থাকে যে প্রোগ্রামে আবেদন করছেন সে সম্পর্কে আপনি কতটুক অবগত। তাদের স্কুলে পড়াশোনায় আগ্রহী কেন? বা তাদের সম্পর্কে কতটুক ধারণা রাখেন ইত্যাদি! ওভারঅল সব মিলে পজেটিভ থাকলে গ্যাড অফিস I-20 ইস্যু করবে যেখানে উল্লেখ থাকবে আপনার টাকা-পয়সার আয় ব্যায়ের হিসেব।
অনেকেই মনে করে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আমারে দ্বারা কিছু হবে না। আমি কি উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যেতে পারব। গুগল, নাসা, ফেসবুক, মাইক্রোসফট এর মতো প্রতিষ্ঠানে জব করতে পারবো? আমি কি বিজ্ঞানী হতে পারবো? প্রফেসর হতে পারবো? আমাদের থেকে অন্যরা তো অনেক এগিয়ে। আপনি যদি তাদের একজন হন?
প্রথমেই আগের অপ্রাপ্তির চিন্তা-ভাবনা বাদ দিতে হবে। এখন আপনাকে মাথায় আনতে হবে আগামীর কথা! সবসময় পজেটিভ চিন্তা রাখবেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আপনি বরং আরো একধাপ এগিয়ে থাকতে পারবেন। বিশ্বাস হয়না? চলুন একটা পরিসংখ্যান করা যাক।
কেয়ার না করা: যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তারা ভাবে অনেক দিন তো কষ্ট করলাম। এবার একটু রিলাক্স করি। এই রিলাক্স করতে করতে কখন যে থার্ড ইয়ারে এরা চলে আসে বুঝতেই পারেনা। এরা আড্ডা-মাস্তি, ট্যুর দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমার দেখা অনেকেই উদাসীন থাকে লেখাপড়ার ব্যাপারে। অন্যদিকে যারা জাতীয়তে পড়ে তারা একটু কেয়ারফুল হয় কেননা জাতীয়তে রেজাল্ট ভাল করা একটু টাফ। এখানে কোথা থেকে প্রশ্ন আসবে জানা যায় খুব কম। পাবলিক এর মতন কিছু প্রশ্ন পড়লেই হয়না বরং আরো বেশি পড়া লাগে। কিছু শিক্ষার্থী আলাদা সব সময় থাকে, যারা আসলেই এসব নিয়ে ভাবে। আপনাকে তাদের মধ্যে একজন অন্যতম হতে হবে।
অনেক সময় পাওয়া: যারা জাতীয়তে পড়ে এদের হাতে বেশ ভালো সময় থাকে। অনন্ত পাবলিকে যারা পড়ে তাদের থেকে বেশি থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস খুব কম হয়, অন্যদিকে পাবলিকে বেশ ভালই ক্লাস হয়। সাথে থাকে Assignment-Presentation ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক সময় ক্লাস ৯টা থেকেও থাকে প্রায় ১টা অবধি। ক্লাস থেকে এসে সন্ধ্যা অবধি ঘুম। সন্ধ্যাতে উঠে হয় টিউশন নাহলে আড্ডা। এরা হাতে সময় কম পায়।
কিন্তু কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে বেশি সময় পায়। ক্লাস কম হয়, এতো Assignment-Presentation থাকেনা। নিজের পড়াশোনা জন্যেও বেশ সময় পাবেন। মনে রাখবেন, CGPA ভালো না হলে চান্স পাওয়া একটু টাফ। সুতরাং কলেজ বা ভার্সিটি এই পরিচয় না এনে নিজের ডিপার্টমেন্ট এর পরিচয় মাথায় আনুন৷ পাঁচ তারকা হোটেলে যে চাল থেকে ভাত হয়, রাস্তার পাশের হোটেলেও সেই চাল থেকে ভাত হচ্ছে। সুতরাং চাল এর পরিচয় মুখ্য, স্থানভেদে জিনিসের পার্থক্য হলেও উপাদান একই!
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সুচিন্তিতভাবে আগানো দরকার বলে আমি মনে করি। তার কিছু নিচে উল্লেখ করলাম-
১. মোটামুটি সিজিপিএ;
২. ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ানো ও IELTS/TOEFL-এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া; (সাধারণত IELTS score মাস্টার্স এর জন্য ৬.৫, কোন মডিউলে ৬ এর কম নয়);
৩. এনালিটিকেল দক্ষতা প্রমাণের জন্য GRE/GMAT এক্সাম শেষ করা একটা ভালো স্কোর সহ ৩১০+;
৪. যত বেশি সম্ভব ছোটো খাটো জব, প্রোজেক্ট এ কাজ করার অভিজ্ঞতা নেওয়া;
৫. সম্ভব হলে পাবলিকেশন করা;
৬. এক্সটা কারিকুলাম কাযক্রমে অংশগ্রহণ করা। বিভিন্ন ট্রেনিং, সেমিনার-সিম্পজিয়াম, লিডারশীপ প্রগ্রাম, সোশাল ওয়াক;
৭. কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারিক জ্ঞান বাড়ানো, কারণ তা আপনার উচ্চশিক্ষার জন্য লাগবেই;
৮. পড়াশোনা করা অবস্থাতেই বিভিন্ন দেশের উচ্চ শিক্ষার সুবিধা অসুবিধা সম্পকে খোজ রাখা।
৯. কমিউনিকেশন দক্ষতা বাড়ানো কারণ আপনাকে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রফেসর, ডিন ও কোঅডিনেটর এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে;
১০. সর্বোপরি সময়, শ্রম ও ধৈর্য ধরে লেগে থাকা কোন অবস্থাতেই নিরাশ না হওয়া।